আমাকে একটি কফিনে ঢুকিয়ে পেরেক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাটিতে নামানোর সময় আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, “মরিনি আমি!”
কিন্তু কেউ শোনেনি আমার কথা, খোদাও না।
একটু একটু করে যখন মাটি ফেলছিলো ওরা, আমার শ্বাসের সাথে যেন মিশে যাচ্ছিলো মাটির দলা।
ফাঁকফোঁকরগুলো বন্ধ হয়ে অন্ধ হলাম আমি।
অন্ধকারে আমি প্রতীক্ষা করি, মৃত্যু আসে না কেন?
নাকি আমি মৃত হয়েও জীবিত, বা জীবিত হয়েও মৃত!
প্রথম দিনটা শুধু কান্না আর ধাক্কাধাক্কি।
দ্বিতীয় দিন আমি হিসাব রাখা ছেড়ে দিলাম।
তারপর কেবল সময়হীন নীরবতা।
কিন্তু…
এক সময় আমি টের পেলাম, এই কফিনে আমি একা নই।
দেয়ালের গায়ে কারো নখের আঁচড়,
কেউ যেন নিঃশ্বাস ফেলছে ধীর, ঠান্ডা শ্বাস…
আমার পিঠ ঘেঁষে।
আমি হিম হয়ে যাই।
গলার স্বর আসে না—
তবুও এক কানে ভেসে আসে চাপা শব্দ,
“তুমিও শোনো?”
হঠাৎই মনে পড়ে যায়—
আমি কোথায় যেন এসেছিলাম এক রাতে,
এক পুরনো কবরস্থানে,
একটা ডকুমেন্টারি বানাতে।
সেই কবরস্থানে পা দিয়েই,
আমি ঠেকে গিয়েছিলাম একটা পুরনো পাথরে।
লেখা ছিলো:
“যে জানে সে মরে, যে জানে না, সে ফিরে আসে।”
আমি তো জানি না মরে গেছি কি না…
তাহলে?
শ্বাস নিতে পারি না।
তবু মরি না।
ঘুম আসে না।
তবু জেগে উঠি না।
আমি কি দুঃস্বপ্নে বন্দী?
তখন কফিনের দেয়াল ফেটে ওঠে এক ফাটল,
সেখানে চোখ… হ্যাঁ, এক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি চোখ ফেরাতে পারি না।
সে বলে,
“তোমাকে ডেকে এনেছিলাম, কারণ তুমি শুনতে পাও।”
আমি বলি,
“কি শুনি আমি?”
সে উত্তর দেয় না।
শুধু ফিসফিস করে,
“তোমার পালা শেষ হয়নি।”
আমি বুঝতে পারি,
এই কফিনটা আমার নয়।
অন্তত শুধু আমার নয়।
এটা সমস্ত ভুলে যাওয়া মৃতদের কণ্ঠস্বরের সংগ্রহশালা।
তারা কথা বলে, ফিসফিস করে,
আমার ভেতর দিয়ে অন্য কোথাও পৌঁছায়।
আমি এখন আর মানুষ না।
আমি মাধ্যম।
মৃত আর জীবিতদের মাঝখানে ঝুলে থাকা এক চিরন্তন প্রতীক্ষা।
আজ রাতের পরে কেউ আর কবরে শান্তিতে ঘুমাবে না।
কারণ আমি শিখে গেছি, কীভাবে কথা বলতে হয়, কফিনের ভেতর থেকেও।
সাইফ সামির
লেখা: ১৮ মে, ২০২৫ | প্রকাশ: ২১ মে, ২০২৫